সুগন্ধি মনকে করে প্রফুল্ল। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা ও ক্লান্তির মাঝে মিষ্টি ঘ্রাণ আপনাকে দেবে সতেজতা। সুন্দর পোশাকের মতো সুগন্ধি ব্যবহারের মধ্য দিয়েও প্রকাশ পায় মানুষের ব্যক্তিত্ব

সুগন্ধি ব্যবহারের ইতিহাস বহুকালের। একটা সময় শুধু ধর্মীয় উপাসনায় সুগন্ধি ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন মিশরের রাজসভায় সভাসদদের লিলিফুলের সুঘ্রাণযুক্ত পরচুলা পরার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। কবে, কোথায় সুগন্ধি উৎপাদন হয়েছে- এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ধারণা করা হয় মেসোপটেমিয়ায় (কুয়েত, সৌদি আরব, ইরাক) এটি প্রথম উৎপাদন হয়। সুগন্ধি আবিষ্কারে বিশ্বের প্রথম রসায়নবিদ নারী তাপ্পুতীর কথা বলা হয়েছে কোথাও। পরবর্তী সময়ে রোমান ও পারসিয়ানরা সুগন্ধি তৈরি করা শুরু করে। সাইপ্রাসে চার হাজার বছর পুরোনো সুগন্ধি তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। একটা সময় ফুল, তেল, গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে সুগন্ধি তৈরি করা হলেও বর্তমানে এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নানারকম রাসায়নিক পদার্থ, গোলাপ, বেলি, জুঁইসহ বিভিন্নরকমের ফুলের নির্যাস। এখন প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই সুগন্ধি উৎপাদন করে বোতলজাত করা হয়। যা বডি স্প্রে, পারফিউম ও আতর নামে পরিচিত। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন- আরব আমিরাত, সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, লেবানন, মিশর, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, চেক রিপাবলিক, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া সর্বাধিক সুগন্ধি উৎপাদন করে থাকে।

শরীরের দুর্গন্ধ দূর করে সুবাসিত করে তুলতে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় সুগন্ধি ব্যবহারের পর অল্প সময়েই তা মিলিয়ে যাচ্ছে। কিংবা ঘামের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আরও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দামি সুগন্ধি ব্যবহার করেও লাভ হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ সুগন্ধি ব্যবহারে সঠিক পন্থা অবলম্বন না করা। তাই জেনে নিন সুগন্ধি ব্যবহারের কিছু নিয়ম।

চুলে সুগন্ধি ব্যবহার : চুলে সুগন্ধি স্প্রে করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। সুগন্ধিতে থাকা অ্যালকোহল চুলকে করে ঝরঝরে। চুল যত লম্বা হবে ঘ্রাণ তত স্থায়ী হবে। তাই কোথাও বেরোনোর আগে চুলে পারফিউম স্প্রে করে নিন।

 পালস পয়েন্ট : শরীরের পালস পয়েন্ট যেমন- হাতের কনুই, কব্জি, হাঁটুর পেছনে, পায়ের গোড়ালি, কলার বোন, কানের পেছনে ইত্যাদি জায়গায় পারফিউম স্প্রে করলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত সুঘ্রাণ স্থায়ী হয়। 

 ত্বকে স্প্রে : সুগন্ধি দীর্ঘস্থায়ী করতে কাপড়ে নয়, বরং সরাসরি ত্বকে স্প্রে করুন। কেননা কাপড়ে থাকে নানারকম রাসায়নিক পদার্থ। পারফিউম স্প্রের কারণে কাপড়ে দাগ পড়তে পারে।

ঘর্ষণ নয় : পারফিউম স্প্রের পর জায়গাটি ঘষবেন না। এতে করে সুগন্ধি ধীরে ধীরে ছড়াবে। ঘর্ষণের ফলে সুগন্ধি অল্প সময়ে বিলীন হয়ে যায়।

গোসলের পর পারফিউম স্প্রে : গোসলের মাধ্যমে শরীর পরিষ্কার হয়। শরীরের লোমকূপ উন্মুক্ত হয়। আর্দ্র ত্বকে পারফিউম স্প্রে করলে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকবে। 

ময়েশ্চারাইজড ত্বক : নরম ও মসৃণ ত্বকে সুগন্ধি বেশিক্ষণ থাকে। তাই পারফিউম স্প্রে করার আগে ত্বকে ঘ্রাণহীন ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। 

সময় অনুযায়ী : দিন ও রাতের পার্থক্যে পারফিউমের ঘ্রাণ হালকা বা কড়া নির্বাচন করা উচিত। দিনের বেলায় হালকা ও রাতের বেলা একটু কড়া ঘ্রাণই ভালো লাগে।

সুগন্ধি যে কেবল মনকে সজীব করে তা নয়। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দেয়। কেননা এটি শরীরের দুর্গন্ধবিষয়ক দুশ্চিন্তাকে দেয় ছুটি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুগন্ধ মন ভালো রাখার পাশাপাশি একজনকে অপরজনের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। কারণ ঘ্রাণেন্দ্রিয় মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। 

স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সুগন্ধির ভূমিকা রয়েছে। সুগন্ধি মানুষের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মনকে মুক্ত করে অনেকটাই চনমনে করে তোলে। তাই শরীরও ভালো থাকে। অ্যাসেনশিয়াল তেলসমৃদ্ধ সুগন্ধি মনকে শিথিল করে রাতে ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।

যেসব পারফিউম ব্র্যান্ডগুলো এখন জনপ্রিয় : reed Aventus, Aqua Di Gio Profumo, Dior savage, Versace Eros, Chanel, Viktor and Rolf, Micheal kors, Dolce and Gabbana ইত্যাদি।